লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কামনাশীষ দুর্নীতি ও অপকর্মে শ্রেষ্ঠ।

ডাক্তার কামনাশীষ মজুমদার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর পূর্বেও তিনি একই প্রতিষ্ঠানে ‘মেডিকেল অফিসার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

জানা গেছে, ডাক্তার কামনাশীষ মজুমদার একই উপজেলার ৮নং বড়খেরী ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। সরকারী বিধি মোতাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জি ও অনুসারে সরকারি কোন কর্মকর্তা তার নিজ এলাকায় পোস্টিং সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ও চাকরিবিধি পরিপন্থী। কিন্তু তিনি তৎকালীন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানকে প্রভাবিত করে তার এলাকায় অবৈধভাবে নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পোস্টিং নেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই প্রতিষ্ঠান মেডিকেল অফিসার হিসেবে থাকা কালে পুরনো টিনশেড হাসপাতাল থাকাকালে টিন, আসবাবপত্র, ও মোটা মোটা রেইনট্রিসহ মূল্যবান গাছ বিনা টেন্ডারে বিক্রি করে দেন। এই নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

ডাক্তার কামনাশীষ মজুমদার একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেডিকেল অফিসার,সেকমোদের সাথে অসদাচারণ করেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানিয়েছেন-‘চিকিৎসকদের বিভিন্ন স্থানে প্র্যাকটিস করার অবৈধ সুবিধা দিয়ে বেতন উত্তোলনের সময় কামনাশীষ চিকিৎসকদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেন।’ চিকিৎসকদের অন্যত্র বদলি হলে স্বাক্ষর করার সময় অর্থ দাবি করেন এবং অর্থ না পেলে রিলিজ পেপারে স্বাক্ষর না করে গড়িমসি করেন। শুধু তাই নয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা ইনডোর রোগীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ভর্তি ও চিকিৎসা করান বলেও জানা গেছে। তিনি স্থানীয় হওয়ার সুবাদে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ করেন। ভুক্তভোগী অনেকেই তার ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

সেবাপ্রাপ্তির জন্য এলে গরীব অসহায় রোগীদের নোয়াখালীর বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে রেপার করেন ও প্রাইভেট ল্যাব থেকে সুবিধা নিয়েও নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়ে রোগীদের সর্বশান্ত করেন বলে জানা গেছে। ডাক্তার কামনাশীষ মজুমদার সার্টিফিকেট দিয়েও মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন। নামে-বেনামে বিভিন্ন ভাইচার বানিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাট করেন বলেও জানা গেছে। কামনা শীষ মজুমদার রামগতিতে প্রশাসনিক বলয় সৃষ্টি করে যা ইচ্ছে তা করে যাচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কামনাশীষ মজুমদার শর্ট মেয়াদের ঔষধ টেন্ডারে ক্রয় করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তার যোগসাজশে তা রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে তা পরবর্তীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র সমূহের মাধ্যমে নিরীহ অসহায় রোগীদের মাঝে বিতরণ করেন। এতে করে টেন্ডারের মোটা অংকের টাকাও লুটে নেন এই কর্মকর্তা।

কোভিড-১৯ এ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় ৩ লাখ টাকা, পরিবহন ব্যয় ১ লাখ টাকা, প্রশিক্ষণ ব্যয় দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পরেও রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড নাইন্টিনের কোন চিকিৎসা না করিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদিকে নামেমাত্র প্রশিক্ষণ দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে।

রামগতি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কামনাশীষ মজুমদারকে উপরোক্ত বিষয়ে বারবার মুঠোফোনে কল করেও না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)জেলা সভাপতি ডাক্তার মোঃ জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার রত্নদ্বীপ পাল বলেন-‘ডাঃ কামনাশীষ মজুমদারের দুর্নীতি অনিয়ম ও চিকিৎসায় অবহেলার কারণে স্বাচিপ জেলা শাখা প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। এর আগেও তার অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর একাধিক পেপার পত্রিকায় এসেছে। সে ওখানে পোস্টিং নেয়ার পর থেকে গাছ কাটা, হাসপাতালের টিন আসবাবপত্র বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করিয়েছি।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার আব্দুল গফফার বলেন-‘অনিয়মের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *