লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে ঘুর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও মেঘনার অস্বাভিক জোয়ারের ফলে দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কালভার্ড সহ পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলে গ্রামীণ জনপদে পাঁকা সড়ক ভেঙ্গে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় দুর্ভোগ চরমে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের চরসেকান্তর-মুন্সিরহাট সড়ক, রামগতি বাজার-আলেকজান্ডার সড়ক,বিবিরহাট-রামদয়াল সড়ক ও বিবিরহাট মাজার রোড সহ মোট ৮ টি পাকা সড়কের ১১ কিলোমিটার ও ৪ টি কালভার্ট ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
অন্যদিকে কমলনগর উপজেলার চরফলকন, সাহেবেরহাট, পাঠারিরহাট, চরমার্টিন, চরলরেন্স ও চরকালকিনি ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদের পাকা রাস্তা ও কালভার্টগুলো অতিরিক্ত জোয়ারের প্রভাবে ভেঙে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তোরাবগন্জ -মতিরহাট সড়ক, বলিরপোল সড়ক, নটমার্টিন সড়ক সহ মোট ১২ টি পাকা রাস্তার ১০ কিলোমিটার এলাকা ও ৪ টি কালভার্ট ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেন কমলনগর উপজেলা এলজিইডি অফিস। এই সড়কগুলোর উপর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে কার্পেটিং উঠে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়ে যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে এসব সড়কে চলাচলকারী হাজার-হাজার মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
চরমার্টিন শান্তিরহাট এলাকার আনিছুর রহমান, বলিরপোলের আবুল বাসার জানান, কয়েকদিন আগে চলাচল উপযোগী হওয়া এসব সড়কগুলোর উপর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে এখন ভেঙে গেছে।
কমলনগর উপজেলা এলজিইডি অফিস সুত্রে জানাযায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কমলনগরে ৪ টি কালভার্ট, ১২ টি পাকা সড়কের ১০ কিলোমিটার রাস্তা ও ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে রামগতির চরসেকান্তর -জনতা বাজার সড়কটির সংষ্কার কাজ (কার্পেটিং) শেষ হয়েছে মাত্র এক সাপ্তাহ আগে। এরই মধ্যে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি উঠে সড়কটির কার্পেটিং উঠে গেছে। গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী প্রায় ২০ হাজার মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। হঠাৎ করে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে এ সড়কে চলাচলকারী হাজারো মানুষ। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রামেই প্রবেশ করেছে জোয়ারের পানি। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে একাধিক গ্রামে। যানবাহন চলাচল করতে না পারায় ব্যাপক জনদুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
চরসেকান্তর এলাকার মনির হাওলাদার, নুরুল ইসলাম ও ইরফান সহ কয়েকজন জানান, কয়েকদিন আগে যানচলাচলের উপযোগী করা সড়কটিতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় এখন তা ভেঙে গেছে। রামগতি উপজেলার চরগাজী,বড়খেরী, চরআলেকজান্ডার, চররমিজ ও চরআলগী ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রামেই প্রবেশ করেছে মেঘনানদীর জোয়ারের পানি। ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এলজিইডির নির্মাণকৃত বেশ কয়েকটি পাকা সড়ক ও কালভার্ট। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের দাবী এলাকাবাসীর।
রামগতি উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী মোঃ আব্দুর রহিম জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে রামগতিতে ৪ টি কালভার্ট,৮ টি পাকা সড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্য রামগতি-আলেকজান্ডার সড়ক ও চরসেকান্তর-জনতাবাজার সড়ক অন্যতম।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রামগতি উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন মাসুম ও কমলনগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার বলেন, নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্টের তালিকা প্রনয়ণ করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে।
জানতে চাইলে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মোমিন ও কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়ে রাস্তঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবিষয়ে তালিকা প্রনয়ণের কাজ চলমান। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানালেন তারা।