শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন

রাণীশংকৈলে মাঘের বৃষ্টি ও ঝড়ে সরিষায় নুয়ে পড়ল কৃষকের স্বপ্ন।

মোঃ আনোয়ার হোসেন আকাশ,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ / ২০৭ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলেন শামীম। গাছে ফলন ভালো ধরেছিল। দু-এক দিনের মধ্যেই সরিষার গাছ কাটবেন। এরপর সরিষা মাড়াইয়ের পর তা বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করবেন।

সেই জমিতে রোপণ করবেন বোরো ধান, এমন স্বপ্ন নিয়েই ‍শুক্রবার রাতে ঘুমিয়ে শনিবার সকালে উঠে দেখেন তাঁর খেতের সরিষা মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এমন চিত্র দেখে শামীমের স্বপ্নে যেমন গুড়েবালি, তেমনি তাঁর মতো ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার অনেক কৃষকের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে ঝড় ও দমকা হাওয়া।

শুক্রবার ছাড়াও গতকাল শনিবারও থেমে থেমে বৃষ্টি হয়।

কৃষক শামীমের বাড়ি রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সন্ধারই এলাকায়। তিনি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেছিলেন সরিষা। রবিবার সকালে কথা হয় শামীমের সঙ্গে। তিনি জানান, সরিষাখেত নষ্ট হওয়ায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।

সরিষা তুলে সেই জমিতে আবার বোরো ধান রোপণ করবেন কৃষকেরা। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির সরিষা ঝড়ে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, সমগ্র উপজেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির সরিষা মাটিতে নুয়ে পড়েছে।

গত দুইদিনের হঠাৎ বৃষ্টিতে উপজেলার আট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার সরিষাগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। কৃষকেরা বলছেন, যে সরিষার দানা হয়ে পেকে গেছে সেগুলোতে পোকা ধরতে পারে। আর যেগুলোর সরিষা এখনো দানা ধরেনি তবে ধরার উপক্রম, ওইগুলোতে ফলন ভালো হবে না। হলেও পরিমাপে ছোট হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়,চলতি বছর রাণীশংকৈলে বিভিন্ন জাতের ৫ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ ঝড়বৃষ্টিতে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির সরিষা নুয়ে পড়েছে। ফসল রক্ষার জন্য খেত থেকে পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি ছত্রাকনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কৃষকেরা জানান, সাধারণত বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ মণ সরিষা হয়। তবে এ ঝড়ের কারণে তা বিঘায় দুই থেকে তিন মণ কমে যাবে। এতে তাঁদের বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে ৬ হাজার টাকা লোকসান হবে। খুচরা বাজারে সরিষা দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করতে পারেন কৃষকেরা।

উপজেলার জওগাঁ এলাকার কৃষক তুহিন হাড়িযার ও কবির সন্ধারই সাতঘরিয়া এলাকার ওহেদুল বলেন, স্বল্প সময়ে সরিষা ঘরে তোলার ক্ষেত্রে কৃষকেরা এ ফসলটি আবাদ করেন। তাঁরা একদিকে বোরো ধানের বীজতলা করেন, অন্যদিকে সেই খেতেই সরিষা আবাদ করেন।

বোরো ধানের চারা বড় হওয়ার আগেই সরিষা পেকে যায়। তা কেটে ঘরে তুলে সেই খেতেই বোরোর চারা রোপণ করা যায়। তাই যে কৃষকেরা তাঁদের জমিতে বোরো আবাদ করবেন, তাঁরা এই স্বল্পকালীন সরিষা আবাদ করে থাকেন। এই আবাদে খুব বেশি খরচও নেই বলে জানান কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘আমরা যত দূর জেনেছি তাতে পুরো উপজেলার ৫০০ হেক্টর জমির সরিষা মাটিতে নুয়ে পড়েছে। সরিষার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এখন সরিষা খেতের পানি নিষ্কাশন ও সরিষায় ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর