শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

শিক্ষা গ্রহণে স্ব-উদ্যোগী হওয়া একান্ত জরুরী।

কলামিস্টঃ জুলফিকার বকুল / ২২১ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০২২

শিক্ষা গ্রহণে স্ব-উদ্যোগী হওয়া একান্ত জরুরী।
——————————————————
জুলফিকার বকুল
শিক্ষক,ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল, গাজীপুর।
——————————————————-
মানব সম্পদ উন্নয়নের মূখ্য উপাদান হচ্ছে শিক্ষা। কারণ, শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তি জ্ঞান আহরণ করে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করে। উদার দৃষ্টিভঙ্গি, আত্মমূল্যায়ন,বিচার-বিশ্লেষণ, সংশোধন, কর্মসম্পাদন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সাধারণত প্রকৃত শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

ফলে সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়ে ব্যক্তি দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠে। কিন্তু এই মানবিক গুণাবলী অনুধাবনের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। আর এ জন্যই যুগে যুগে নানামুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

মানুষের প্রয়োজনবোধ থেকেই শিক্ষা এখন মৌলিক অধিকারের আওতায় এসেছে। অর্থাৎ এটি গ্রহণ করা আমার অধিকার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই অধিকার আদায়ে আমরা কতটা অনুরাগী বা সোচ্চার?

একটা সময় মানুষ শিক্ষা অর্জনের চেয়ে অর্থনৈতিক আয়ের দিকে বেশি গুরুত্ব দিত।তাই সন্তানকে স্কুলে না পাঠিয়ে অর্থ সংশ্লিষ্ট কাজে পাঠাত। বর্তমান সময় আধুনিক সভ্যতার।

প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কম-বেশি শিক্ষা সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তি রয়েছে। কাজেই শিক্ষা গ্রহণ যে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অধিকার তা সম্পর্কে তারা অবগত। আমরা যদি অন্যান্য অধিকারগুলোকে যথাযথভাবে আদায় করতে চাই, তাহলে শিক্ষাকে নয় কেন?

দেশের উন্নয়নে ও জাতির মেরুদণ্ড শক্তকরণে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপ প্রতিটি পরিবারের জন্য। তাহলে যদি সেই সুযোগ কেউ গ্রহন না করে, তবে সে যেমন নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ করল তেমনি জাতীয় সম্পদ তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল।

প্রাকৃতিক মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়েই শিক্ষাক্ষেত্র ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই বলে জ্ঞান অর্জন থেমে থাকেনি। যারা শিক্ষাকে মৌলিক বিষয় মনে করেছে,যারা সন্তানকে সম্পদে পরিনত করতে চায়,যারা গৃহপালিত পশুর চেয়ে সন্তানের যত্ন বেশি করে, তাঁরা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য থেমে থাকেনি। অপরদিকে এর উল্টোটাও হয়ত ঘটেছে কোন কোন পরিবারে। যে অবিভাবক বলত যে, ‘ স্কুলে কি পড়ালেখা হয় নাকি?’ সেই অভিভাবককেই বলতে শুনেছি,স্কুল কবে খুলবে? বাসায় একটুও পড়ালেখা করে না, কোন কথাও শোনে না।’

আসলে আমরা সন্তানের শিক্ষা নিয়ে কতটা ভাবি,কতটা সময় তাদের দেই,জীবন সম্পর্কে কতটা বাস্তব ধারণা তাদের দেই তা ভেবে দেখা দরকার। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, আমার সন্তানকে কেউ ডেকে নিয়ে শিক্ষিত করে গড়ে তুলবে না।যেহেতু কারো অর্জন কেউ নিতে পারে না,তেমনি কেউ গ্রহণ করতে না চাইলে জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না।আমরা আসলে জন্ম দিলেই পিতা-মাতা দাবী  করতে পারি না। সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে সঠিক রাস্তায় তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকাই বেশি গুরুত্ব রাখে।তারপরও সরকার প্রতিটি শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করণে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেও বাড়ী বাড়ী থেকে শিক্ষার্থীকে স্কুলে নিয়ে আসছে।
এ এক অনন্য উদাহরণ। উন্নত বিশ্বে এমনটি আছে কি না আমার জানা নাই।সন্তান আপনার, আর জোর করে শিক্ষা দিতে হয় সরকারকে! কিন্তু  কেন?এই অধিকারটি তো আপনার আদায় করে নেয়ার কথা!

বর্তমানে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা। তাহলে তো শতভাগ উপস্থিত থাকার কথা। ঝরে পড়ার খবর তো পত্রিকায় আসার কথা নয়।প্রায় দীর্ঘ দুই বছর ফিজিক্যালি ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম যথারীতি প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চালু ছিল। আপনার সন্তানের ফেইসবুক, ইউটিউব দেখার সময় থাকলেও, ক্লাস করার সময় ছিল না।ধরে নিলাম আপনি তাকে অনেক ভালবাসেন তাই হয়ত তাকে বোঝাতে পারেন নাই। কিন্তু এখন তো প্রতিষ্ঠান খোলা, এখন তো তার অনুপস্থিত থাকার কথা নয়! বিষয়টি বড়ই দুঃখজনক। আমরা আসলে কি চাই? হাইব্রিড পড়ালেখা অর্থাৎ ক্লাস,স্কুল প্রয়োজন নেই শুধু পাস,সার্টিফিকেট! এমন মানসিকতা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসা উচিৎ। অন্যথায়,নিজ সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য আমরা নিজেই দায়ী থাকব।

এক সময় আমরা এই সন্তানের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হব।সন্তানের সঠিক শিক্ষা গ্রহনে স্ব-উদ্যোগী হওয়াটা খুবই জরুরী। অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকাটা সমীচীন নয়। আপনার সন্তান যতটা মেধাবী হয়ে গড়ে উঠবে জাতিও ততটা মেধাবী হয়ে আত্ম প্রকাশ করবে। শিক্ষা অর্জনে উদাসীনতা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মত।বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের কোন বিকল্প নেই। আর এটা স্ব-প্রণোদিত হয়েই গ্রহণ করতে হবে।কারণ,শিক্ষা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য নয় জীবনের জন্য প্রয়োজন।

শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের একমাত্র হাতিয়ার হলো শিক্ষা। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,’ তাকেই বলি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা যা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, যা বিশ্ব সত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা, আর সমস্তই তার অধীন।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর