বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ১১:২৭ অপরাহ্ন

লিজা আজ নারী পুলিশ সদস্য।

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান,বাঘা(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ / ৪৩৩ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২

লিজা আজ নারী পুলিশ সদস্য

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ২০ বছর আগে বুলবুলি বেগম (২০) ও রিফাজ উদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সংসারে নানা কারণে অশান্তি লেগেই থাকতো। দুই বছর পর তাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়। প্রথম সন্তান মেয়ে বলে রিফাজ উদ্দিন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না।

মেয়েকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্য এক পর্যায়ে মুখে বিষ দেন আপন পিতা। তখন মেয়েটির বয়স সবে মাত্র ৯ মাস। মেয়ের মুখে বিষ দেওয়ার পর তার মা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। পরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। আজ সেই মেয়েটি বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি পেয়েছে। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লিজা খাতুন।
লিজার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছোট বেলা থেকে বাবার কাছ থেকে কোনো আর্থিক সাহায্য না পাওয়ায় দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করতে হয়েছে। মামার বাড়িতে মানুষ হয়েছেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার আগ্রহ ছিলো বেশ লিজার। বর্তমানে তিনি শাহাদৌলা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়েছেন।
এর আগে গত মাসে পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করে লিজা। তারপর যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে চাকরি পান।
এ বিষয়ে লিজা খাতুন বলেন, ‘পুলিশের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ১৫০ টাকা দিয়ে প্রথমে চাকরির আবেদন করি। এরপর উচ্চতা, শরীরচর্চা, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভাসহ সাতটি ধাপ পার করে আমার যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পেয়েছি। এজন্য কারো সুপারিশের প্রয়োজন হয়নি। আমি রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন স্যার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো’।
তিনি আরও বলেন, ‘এই পর্যন্ত আসার পথ আমার জন্য সহজ ছিলো না। অনেক ছোটবেলা থেকে বাবা নেই, মামার বাড়িতে থেকে বড় হয়েছি। খালা ও মামার সহযোগীতায় স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েছি। বড় হওয়ার পর শুনেছি বাবার নিষ্ঠুরতার কথা। বাবাকে এখনো দেখা হয়নি’।
লিজার মা বুলবুলি বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এর মধ্যেই মেয়ে হওয়ার পর থেকে নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। একপর্যায়ে নিজের মেয়ের মুখে বিষ দেয় তার বাবা রিফাজ।
তবে পরবর্তী এ বিষয়ে ভুল বুঝে অনুশোচনা করে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর ঢাকায় চাকরি করতে যাওয়ার নাম করে আর ফিরে আসেনি। তারপর অনেক কষ্ট কর মেয়েকে মানুষ করেছি।
এ বিষয়ে রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, লিজা একজন মেধাবী পুলিশ সদস্য। নিয়োগের সময় অনেক প্রার্থী ছিলো। সেখানের নক আউট সিস্টেমে ৭টি পরীক্ষার ধাপ পার করে নিজ যোগ্যতায় নিয়োগ পেয়েছে। সরকারের নতুন চাকরি প্রদ্ধতির কারণে অনেক অস্বচ্ছল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা পুলিশের চাকরি পাচ্ছে। যারা আগামীতে দেশ ও জাতি গঠনে দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর