রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন

মৌলভীবাজারের শেরপুরে পৌষ সংক্রান্তি ২ দিন ব্যাপি ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা।

জালাল উদ্দিন, নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ / ১৬৮ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৪

জালাল উদ্দিন,নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা শুরু হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার শেরপুরের পশ্চিমের মাঠে।
শনিবার ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ইং, ভোর থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা। মাছের মেলাটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা এটি।
এটি যদিও মাছের মেলা নামে পরিচিত তথাপি মাছ ছাড়াও বিভিন্ন পসরার কয়েক হাজার দোকান বসে কুশিয়ারার নদীর তীর জুড়ে। মেলায় এখন মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, গৃহস্থালী সামগ্রী, খেলনা সামগ্রী, নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকানসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকান স্থান পায়। এছাড়া শিশুসহ সব শ্রেণীর মানুষকে মাতিয়ে তোলার জন্য রয়েছে বায়োস্কোপ ও চড়কি খেলা। পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো অন্যতম।
আগে এই মাছের মেলায় স্থানীয় বিভিন্ন হাওর-বাওরের, নদ-নদীর মাছ নিয়ে আসতো জেলেরা। এখন মৎস্য খামারগুলোর মাছতো আসেই। আসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিরাট বিরাট বড় বড় মাছ-সহ অন্যান্য চালান। সিলেটের কুশিয়ারা নদী, সুরমা নদী, মনু নদী, হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বাঘ, রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, আইড়সহ বিশাল বিশাল মাছ নিয়ে আসেন।
মাছের এ মেলায় ৫ হাজার টাকা মূল্যের কমে চাহিদার মাছ কেনা যায় না। কারণ মাছের মেলা বলে কথা। বড় ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক পূর্বে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করতে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দাম ও হাঁকা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানা যায়, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে আড়ত থেকে ছোট বড় অনেক জাতের মাছ নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েন। মাছের গন্ধে মৌ মৌ করে ওঠে পুরো এলাকা। মেলায় ছোট আকারের মাছের দাম হাকানো হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের মাছের দাম হাঁকানো হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের মাছের দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকাও হাঁকানো হয়।
এছাড়া মেলা উপলক্ষ্যে শেরপুর, নবিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আশেপাশের গ্রামের প্রবাসীরা প্রতিবছর মেলার জন্য দেশে এসে থাকেন। বর্তমানে এই মেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষের জন্য মিলনমেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
বিগত প্রায় ২০০ বছর ধরে সেখানে ধারাভাহিকভাবে এই মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
প্রতি বছরে ঐতিহ্যবাহী শেরপুরের মাছের মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষ মূলত আসেন মাছ কেনার জন্য। এই মেলা বাঙালির সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে।
মাছের পাশাপাশি বিশেষ করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন- নকশীকাঁথা, শীতলপাটি এবং কাঠের তৈরি হরেকরকমের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। পাশাপাশি দেশেরও বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্রেতারা বাচ্চাদের খেলনা, টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় জামদানী শাড়ি, বগুড়ার দই ইত্যাদি নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্য।
পৌষসংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে সদর উপজেলার সত্রস্বতী পরগনার সাধুহাটি গ্রামের জমিদার রাজেন্দ্রনাথ দাম (মথুর বাবু) কুশিয়ারা তীরবর্তী তৎকালীন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্থলবন্দর হিসেবে খ্যাত শেরপুরে এ মেলার প্রচলন করেছিলেন প্রায় ২ শত বছর আগে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত অতীত ঐতিহ্যকে ধারন করে এ মেলা চলে আসছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর