শিরোনাম
Cómo hacer un bong con una botella de agua sin papel de aluminio Качественная поставка бетона по Краснодару কালিয়াকৈরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২টি কারখানাকে জরিমান। বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে তুহিনের মুক্তির দাবীতে ডিমলায় বিক্ষোভ মিছিল। রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ততায় কালিয়াকৈরে ক্যাম্পেইন ও লিফলেট বিতরণ। ঠাকুরগাঁওয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসে বিনামুল্যে স্বাস্থ্যসেবা। নারী বিষয়ক সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ। গৃহবধু হত্যা মামলার আসামী না ধরলে বালিয়াডাঙ্গী থানা ঘেরাও করার ঘোষণা। দুর্গাপুরে বিএনপি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিএনপির  বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা। কমলগঞ্জে বর্ণীলসাজে মণিপুরীদের ঐতিহ্যগত “লাই-হরাউবা” উৎসব।
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

রাণীশংকৈলে টিভি ধার করে মেয়ের ফুটবল খেলা দেখলেন চা-দোকানি বাবা।

মোঃ আনোয়ার হোসেন আকাশ,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

আনোয়ার হোসেন,রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাগরিকাকে দেখে মনে হচ্ছিল লাজুকলতা! যিনি মাঠে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছেন নিজের দিকে।
শুক্রবার অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে সাগরিকা করেছেন জোড়া গোল। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে জেতানোয় বড় ভূমিকা রেখেছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের মেয়ে সাগরিকা মাঠে যত সাবলীল, ক্যামেরার সামনে ততটাই জড়সড়!
রাণীশংকৈল রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তাজুল ইসলামের হাতে গড়া নারী খেলোয়াড় সাগরিকা (লিটা)।
একটা সময় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের পাইপলাইন মানেই ছিল ময়মনসিংহের কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়। এরপর সাতক্ষীরা, রাঙামাটি, কুষ্টিয়া, ঠাঁকুরগাওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে একঝাঁক মেয়ে এসে ফুটবল রাঙাচ্ছেন জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দলে। সাগরিকা তাদেরই একজন। উঠে এসেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমির পরিচালক তাজুল ইসলামের হাত ধরে।
বাবাকে ভুল প্রমাণ সাগরিকা লিটার….!
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তাজুল ইসলাম না থাকলে হয়তো সাগরিকার মতো প্রতিভাবান স্ট্রাইকার পেতো না বাংলাদেশের ফুটবল।
অথচ সাগরিকাকে খেলতে দিতে চাইতেন না বাবা লিটন আলী! নেপালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক না পাওয়ার কষ্টের চেয়েও সাগরিকার চোখে মুখে তাইতো অন্য রকম রোমাঞ্চ। যেন বলতে চেয়েছেন, “বাবা, দেখো আমি পেরেছি।”
কোচ সাইফুল বারী টিটুর পাশে বসে সাগরিকা বলছিলেন, “শুরুতে বাবা-মা চাইতেন না ফুটবল খেলি। কিন্তু আমার এক খালা বাবাকে বলেছিলেন, মেয়েকে যদি খেলতে দিতে নাই চাও তাহলে আমাকে দিয়ে দাও। আমার মেয়ের পরিচয়ে ও খেলবে। বাবা-মা তখনও নিষেধ করেন।”
জার্সি, হাফ প্যান্ট পরে মেয়েরা ফুটবল খেলবে, এটা মোটেও ভালো চোখে দেখত না গ্রামবাসী। একই ভাবনা সাগরিকার বাবারও। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে। বাবাকে ভুল প্রমাণ করতে পেরেই খুশি সাগরিকা, “ফুটবল খেলি বলে গ্রামের মানুষ কটু কথা বলতেন। কিন্তু জেদ নিয়ে খেলা শুরু করি। শুধু ভাবতাম, একদিন বাবা-মায়ের ভুল ধারণা ভাঙব। বড় ফুটবলার হয়ে তাদের দেখিয়ে দিব। আজ জাতীয় দলে খেলে সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছি।”
বাবার চায়ের দোকানে ভিড়, গর্বিত গ্রামবাসী….!
অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা সাগরিকার। বাবা চায়ের দোকানদার। বড় ভাই সাগর আলীকে টাকার অভাবে পড়ালেখা শেখাতে পারেননি সাগরিকার বাবা। এলাকার একটি ইটের ভাটায় শ্রমিকের কাজ করছেন সাগর।
মেয়ের ফুটবল ম্যাচ টেলিভিশনে দেখানো হবে। কিন্তু লিটন আলীর টেলিভিশন নেই! প্রতিবেশীর কাছ থেকে টেলিভিশন চেয়ে আনেন লিটন। সেই টেলিভিশনে মেয়ের খেলা দেখেছেন শুক্রবার রাতে।
এলাকার যারা এতদিন নেতিবাচক সমালোচনা করেছেন, তারাই সাগরিকার গোল দেখে গর্বিত। ফোনের অন্য প্রান্তে এসব কথা বলছিলেন আর কাঁদছিলেন লিটন আলী, “মেয়েকে গোল করতে দেখে মনে হচ্ছিল আমি এক গর্বিত পিতা। অথচ এই মেয়েকে ফুটবলে দিতে চাইনি! কত নিষেধ করেছি! কখনও কল্পনাও করতে পারিনি ও এভাবে ফুটবল খেলবে। দোকান তো ভরে গিয়েছিল লোকে। আমি জায়গা দিতে পারছিলাম না। সবাই মেয়ের খেলা দেখে প্রশংসা করছিল।”
কেন মেয়েকে ফুটবলে দিতে চাইতেন না? প্রশ্নটা শুনে বিব্রত লিটন আলী, “এলাকার মানুষ বলত মেয়ে মানুষ ফুটবল খেললে নষ্ট হয়ে যাবে। ভেবেছিলাম মেয়েকে কিছুদিন পর বিয়ে দিয়ে দেব। আজ মেয়ে যেখানে গেছে এজন্য তাজুল স্যারের বড় অবদান।”
অথচ মেয়ে ‍ফুটবল খেলে বলে এক মাস ধরে সাগরিকার সঙ্গে কথা বলেন না লিটন আলী, “আমি নিষেধ করেছিলাম। মেয়েটা কথা শুনল না। তাই এক মাস কথা বলিনা।” চাপা কান্নায় ভরে ওঠে অভিমানী বাবার কণ্ঠ।
ভুল বুঝতে পেরে লিটন আলী বলছিলেন, “ওকে বলতাম জীবনেও কিছু করতে পারবি না। এখন মনে হয় আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। মেয়েই সঠিক।”
রাঙ্গাটুঙ্গী থেকে সিঙ্গাপুরে……….!
মফস্বলের চা দোকানদার লিটন আলী কখনও ঢাকায় আসেননি। কিন্তু ফুটবলের সুবাদে এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম ঘোরা হয়েছে সাগরিকার।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সিঙ্গাপুরে হয়েছিল এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম পর্ব। নারী ফুটবল লিগে পারফরম্যান্সের সুবাদে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার সুযোগ পান সাগরিকা। বাংলাদেশ দ্বিতীয় পর্বে উঠলে ভিয়েতনামেও খেলেন।
এসব প্রসঙ্গ তুলতেই বাবা লিটন আলী বলছিলেন, “কোনোদিন ঢাকায় যাইনি। যেতে পারব কিনা জানি না। আমার বংশের কেউ বিমানে চড়েনি, চড়তেও পারতাম না। কিন্তু মেয়ে বিমানে চড়েছে। এর চেয়ে গর্বের কিছু হয় না।”
যেভাবে সাফের দলে সাগরিকা………..!
রাঙ্গাটুঙ্গী একাডেমির ফুটবলার সাগরিকা বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়েও যাননি। ২০২২ সালে হওয়া ঘরোয়া নারী ফুটবল লিগের সর্বশেষ আসরে জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের নজর কাড়েন। ওই বছর মেয়েদের লিগে খেলেন এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হয়ে। প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে নজরে পড়েন কোচের।
সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, সিরাত জাহান স্বপ্না, শামসুন্নাহার জুনিয়র, শাহেদা আক্তার রিপাদের মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে লড়াই করে তাদের সারিতে নাম লেখান। প্রথম অংশ নিয়েই লিগে করেছিলেন ১০ গোল।
গত বছর কমলাপুর স্টেডিয়ামে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ নারী সাফে খেলেছিল রাশিয়া। যে টুর্নামেন্টে গোল পেতে রীতিমতো লড়াই করতে হয় বাংলাদেশকে। ওই টুর্নামেন্টে ভুটানের বিপক্ষে ১ গোল করেন সাগরিকা। রাশিয়া, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ গোল পায়নি। তবে নেপালের সঙ্গে হারতে বসা ম্যাচে বাংলাদেশ ১ পয়েন্ট পায় সাগরিকার গোলেই।
এরপর সাগরিকা খেলেন এএফসির দুটি টুর্নামেন্টে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে। সেখানেও গোল পেয়েছেন ভিয়েতনামে। ফিলিপাইনের কাছে ৩-১ গোলে হারের ম্যাচে একমাত্র গোলটি সাগরিকার।
স্বপ্ন পূরণ তাজুল ইসলামের……….!
নেপালের বিপক্ষে সাগরিকার খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত তাজুল ইসলাম, “এই মেয়েদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তাতে আমি সফল, স্বার্থক। আমার মত এমন নিধিরাম সর্দারের দেশের বিজয়ে অবদান রাখার এর চেয়ে বেশি ক্ষমতা নেই।”
তাজুলদের মতো সংগঠক আছেন বলেই হয়তো চা-দোকানির সোনার মেয়েরা উঠে আসে এই পর্যায়ে। অবদান রাখে দেশের ফুটবলে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর