শিরোনাম
Cómo hacer un bong con una botella de agua sin papel de aluminio Качественная поставка бетона по Краснодару কালিয়াকৈরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২টি কারখানাকে জরিমান। বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে তুহিনের মুক্তির দাবীতে ডিমলায় বিক্ষোভ মিছিল। রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ততায় কালিয়াকৈরে ক্যাম্পেইন ও লিফলেট বিতরণ। ঠাকুরগাঁওয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসে বিনামুল্যে স্বাস্থ্যসেবা। নারী বিষয়ক সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ। গৃহবধু হত্যা মামলার আসামী না ধরলে বালিয়াডাঙ্গী থানা ঘেরাও করার ঘোষণা। দুর্গাপুরে বিএনপি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বিএনপির  বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা। কমলগঞ্জে বর্ণীলসাজে মণিপুরীদের ঐতিহ্যগত “লাই-হরাউবা” উৎসব।
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন

মাধবপুরে শিল্পবর্জ্যের ভয়াবহ দূষণে পরিবেশ হুমকির মুখে, ল্যাব টেস্টে মিলেছে দুষণ।

নাহিদ মিয়া,মাধবপুর(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি। / ৫৭ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫

মাধবপুরহবিগঞ্জপ্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জের মাধবপুরে শিল্পবর্জ্যের ভয়াবহ দূষণে হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকটি গ্রামের পরিবেশ ও বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অপরিশোধিত বর্জ্য খালের ছেড়ে দেওয়ায় দুষণ ছড়িয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার হরিতলা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ভারটেক ওয়্যার কোম্পানি লি., পাইয়োনিয়ার ডেনিম লি. ও নাহিদ টেক্সটাইল লি. নামে তিনটি বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি তাদের উৎপাদিত অপরিশোধিত বর্জ্য পাশ্ববর্তী খাল দিয়ে নিষ্কাশন করছে। স্থানীয়দের কাছে ওই খালটি ‘রাজখাল’ নামে পরিচিত।
তারা জানান- এক সময় এই খালে মাছ শিকার করতেন এলাকার মানুষ। তখন বিভিন্ন ধরণের দেশীয় মাছের বিচরণ ছিল খালে। এখন সেই খালে মাছ থাকা দূরের কথা, খালের পানি পোড়া মবিলের মতো কুচকুচে কালো। দুর্গন্ধে আশপাশে টেকা মুশকিল।
উপজেলার সাতপাড়িয়া, খতিয়ারপুর, পিয়াম ও সাকুসাইল গ্রামের মানুষরা সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার। এই খালের পানিতে নেমে মারা যাচ্ছে হাঁস-গোরগ, পানি পুকুরে প্রবেশ করে মারা যাচ্ছে চাষের মাছও। এমন কি গৃহপালিত পশু এই খালের পানি পান করে বিভিন্ন সময় অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন শ্বাসকষ্ট ও চর্মসহ বিভিন্ন রোগে।
সম্প্রতি খাল ও অভিযুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান তিনটি থেকে নির্গত পানির মান পরিক্ষা করেছে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়। যেখানে খালের পানি অতিরিক্ত মাত্রায় দুষণের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া একটি কারখানার পানিতেও অতিমাত্রায় দুষণ পাওয়া গেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী ভেতরস্থ পানির পৃষ্ঠর স্বাভাবিক মান ৬ থেকে ৯ পিএইচ হওয়ার কথা। কিন্তু রাজখালের পানি ল্যাব পরিক্ষায় ১০ দশমিক ৬৫ পাওয়া গেছে। সিওডি এর স্বাভাবিক মান প্রতি লিটারে ৫০ মিলিগ্রাম। সেখানে রয়েছে ১ হাজার ২০৮ মিলিগ্রাম এবং টিডিএস লিটারে ১০০০ মিলিগ্রামের স্বাভাবিক স্থলে রয়েছে ১ হাজার ৯৪৯ মিলিগ্রাম।
আশপাশের অন্তত ৫টি হাওরের ফসলি জমিতে সেচের বড় উৎস এই রাজখাল। অথচ খালটি দুষণের কারণে ওই এলাকার অনেক জমি এখন অনাবাদি থাকছে। যেসব জমিতে ধান চাষ হচ্ছে সেগুলোতেও কমে গেছে উৎপাদন। সেই সাথে জমি প্রস্তুতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ।
সাতপাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই খালে এক সময় আমরা মাছ ধরতাম। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত খালের মধ্যে। কিন্তু এখন মাছ পাওয়াতো দূরের কথা, দুর্গেন্ধের কারণে খালের আশপাশে যাওয়া যায় না। খালো নামলে কোমর পর্যন্ত ঢুকে যায়। পানি কুচকুচে খালো।’
একই গ্রামের মোতাহের হুসাইন বলেন, ‘আমরা বাড়ির পাশ দিয়ে এই খাল বয়ে গেছে। কোম্পানীর পঁচা পানি ছাড়ার কারণে দুর্গেন্ধে বাড়িতে থাকা যায় না। হাঁস-মোরগ, গরু-ছাগল পানিতে নামলে মারা যায়, অসুস্থ হয়ে যায়। আমাদেরও এই পানিতে পা-হাত লাগালে চুলকায়। কোম্পানীর পানির কারণে আমরা খুব কষ্টে আছি।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও আমার গ্রামের এক খামারির দুইশ’ হাঁস মারা গেছে। এছাড়া আমার চাচাতো ভাইয়েরও ৭-৮টি হাঁস মারা গেছে।
আব্দুল কাদির নামে এক কৃষক বলেন, ‘খালের পানি দিয়ে সেচ দেওয়া যায় না। বর্ষায় এই পানি জমিতে ঢুকে জমির মধ্যে ক্যামিকেলের লেয়ার পড়ে থাকে। এগুলোর কারণে ফলন হয় না। আবার লেয়ার পরিস্কার করতে গেলে প্রতি বিঘায় ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে আমাদের।
কৃষক রুক্কু মিয়া বলেন, ‘এই পানি যে জমিতে ঢুকে সেই জমিতে ধান হয় না। আমাদের এলাকায় অনেক জমি আছে সেগুলো অনাবাদি পড়ে থাকে। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করার সাহস পাই না। প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- দুষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে কারখানার নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে দেওয়া হয় হুমকি-ধামকি। প্রায় সময় মারপিট করার অভিযোগও করেন কেউ কেউ।
প্রতিবেদন সংগ্রহের সময় ঘটনাস্থলে হঠাৎ উপস্থিত হন কারখানার নিয়োজিত তিন দালাল। তার মধ্যে একজন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদল নেতা এনামুল হক এ্যানি। তার সাথে স্থানীয় দুই যুবক।
এ সময় তারা কারখানার পক্ষে চাপাই গেয়ে উত্তেজিত হন গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর। ছাত্রদল নেতা এ্যানি বলেন, ‘এই এলাকায় ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার কারণে এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে। আপনারা এই উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্ত করতে চান। আমি মনে করি আপনারা ভারতের ‘র’ এর এজেন্ড হিসেবে কাজ করছেন।’এ সময় তারা দূষণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার হুমকিও দেন।
এদিকে, সম্প্রতি রাজখাল ও এর আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেছেন ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র নেতৃবৃন্দ। এ সময় তারা জানান, দুষণ বন্ধে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘মাধবপুরে দীর্ঘদিন ধরে শিল্পদূষণ হচ্ছে, যা স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। আমরা চাই ইন্ডাস্ট্রি হোক, কর্মসংস্থান হোক। তবে ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের বর্জ্য পরিশোধন নিশ্চিত করবে, সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা তা করছে না।’
তিনি বলেন, ‘রাজ খালের দুষিত পানি বলভদ্র নদী হয়ে মেঘনা পর্যন্ত গিয়ে পড়ছে। যার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা জানি, এই দূষণ মনিটরিংয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। তবে তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।
শরীফ জামিল আরও বলেন, ‘সহজ কথায় বলতে গেলে, এই এলাকায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে উন্নয়ন হতে পারে না। এ বিষয়ে প্রয়োজন হলে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হবে। আমরা মামলা পর্যন্ত যওয়ার কথা ভাবতে পারি।
সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘আমরা হাঁস মারা যাওয়ার পর রাজখাল থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করি। এছাড়া তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত পানির নমুনাও সংগ্রহ করি। তবে খালের পানিতে দেখা গেছে প্যারামিটার অনেক বাইরে। একইভাবে তিনটি গ্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত পানির মানেও মাত্রাতিরিক্ত দুষণ পাওয়া গেছে। তবে প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সেই প্রতিষ্ঠানের নাম এই মূহূর্তে প্রকাশ করতে চাই না। আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট আইনে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর