শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

অপরাধ দমনে সচেষ্ট থানার ওসি-কানাইঘাটে তার বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে মিথ্যা অপপ্রচার।

মিজানুর রহমান লাভলু,কানাইঘাট(সিলেট)প্রতিনিধিঃ / ২৭ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫

কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দেশের দুর্যোগ মুহুর্তে সিলেটের কানাইঘাট থানায় ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল আউয়াল। যখন পুলিশের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়েছিল এবং জনসাধারণ ও ছাত্র-জনতার মধ্যে পুলিশ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দেখা দিয়েছে সেই সময় কানাইঘাট থানায় যোগদান করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সহ জনসাধারণের মধ্যে পুলিশের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ওসি আব্দুল আউয়াল। জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকারের সময় যদিও সিআইডি’র ওসি হিসেবে পদোন্নতি পেলেও ডানপন্থী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ওসি আব্দুল আউয়াল আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে কোন থানায় ওসি’র দায়িত্ব পালন থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ওসি হিসেবে কানাইঘাট থানায় প্রথম যোগদান করেন আব্দুল আউয়াল। যোগদানের পর থেকে সারাদেশে যেখানে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি আর সুযোগ সন্ধানীরা মব সৃষ্টি করে অপকর্ম করলেও কানাইঘাটের রাজনৈতিক মহল, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি ইউনিয়নের জনসাধারণের অংশগ্রহণের বিট পুলিশিং ও মতবিনিময় সভা শুরু করেন ওসি আব্দুল আউয়াল। তার সুফল পায় থানা পুলিশ। সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৫ আগস্টের পর খারাপ থাকলেও সবার সহযোগিতায় কানাইঘাটে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সহ পুলিশের সেবা জনসাধারণের দূরগোড়ায়া পৌঁছে দিতে পুলিশিং সেবার উপর গুরুত্ব দেন আব্দুল আউয়াল। যার কারনে জনসাধারণের মধ্যে পুলিশের আস্থা তৈরি হয়। তিনি যোগদানের পর কানাইঘাটে বড় ধরনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সহ মব সৃষ্টি করে সমাজে নৈরাজ্যের মতো ঘটনা ঘটেনি। যদিও ওসি আব্দুল আউয়াল যোগদানের বিচ্ছিহ্নভাবে ৯টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসব হত্যাকান্ড গৃহ শিক্ষক কর্তৃক আলোচিত শিশু মুনতাহা হত্যা, বন্ধু কর্তৃক ছাত্রদল নেতা আব্দুল মুমিন, ভাতিজা কর্তৃক চাচা হত্যা, বাবা কর্তৃক সন্দেহ জনক ভাবে ছেলেকে হত্যা, বন্ধু কর্তৃক আইসক্রিম বিক্রেতাকে হত্যা, প্রতিপক্ষ কর্তৃক চোরাগুপ্ত ভাবে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নেতা শিহাব হত্যা, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রবাসী আব্দুল মতিন হত্যা, পূর্ব বিরোধের জের ধরে মনিপুর গ্রামে আব্দুল ছালিক হত্যা, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে রাজাগঞ্জ খালপার গ্রামে রশিদ আহমদ হত্যাকান্ডের স্বীকার হন। এ ৯টি হত্যাকান্ডের মামলার ৯৫ ভাগ আসামীকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ওসি আব্দুল আউয়াল। অধিকাংশ আসামী বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। এছাড়াও ধর্ষণ, নারী নির্যাতন সহ অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত মামলার আসামীদের দ্রæত গ্রেফতার করে জনমনে পুলিশের আস্থা ফিরিয়ে আনে থানা পুলিশ। কানাইঘাট উপজেলা সীমান্তবর্তী একটি এলাকা হওয়ায় লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ও লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানের মতো ঘটনা ঘটলেও বিজিবি প্রতি মাসে চোরাচালানী পণ্যসামগ্রী আটক করে যাচ্ছে। পাশাপাশি কানাইঘাট থানা পুলিশ চোরাচালান প্রতিরোধ, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার, চোরাচালীন পণ্য আটক করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮টি করে চোরাচালানী মামলা থানায় রুজু হচ্ছে। এছাড়াও ওসি আব্দুল আউয়াল যোগদানের পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোট ১৭১টি নিয়মিত মামলা রুজু করেন, এরমধ্যে ১৫০টি মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে বিচারের জন্য আদালতে প্রেরন করা হয়। এছাড়া গত মাসে সিলেট জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভায় চোরাচালান প্রতিরোধ ও মামলার আসামীদের গ্রেফতারে ভ‚মিকা রাখায় থানার এসআই শাহ আলম ও এএসআই মুজম্মিল হোসেন রিপন পুরষ্কৃত হন।
বর্তমানে পুলিশ চোরাচালান প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করায় সংঘবদ্ধ, প্রভাবশালী, চোরাকারবারী চক্র আগের মতো ৫ আগস্টের পূর্বের মতো কানাইঘাটে পুলিশ, বিজিবি ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক ছত্র-ছায়া, চোরাচালান করতে না পারায় সম্প্রতি কয়েক মাস থেকে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীরা থানার ওসি আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে দেয়। তদন্তে এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় চোরাকারবারীদের শেল্টারদাতা যারা ৫ আগস্টের পূর্বে আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে মাসুহারার মাধ্যমে চোরাকারবারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতো তাদের সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওসি আব্দুল আউয়াল সহ আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ও অপরাধ দমনে যারা পুলিশকে ভালো কাজে সহযোগিতা করেন তাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে মিথ্যা, বানোয়াট ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে কানাইঘাটের সচেতন মহল মনে করেন।
তারা বলেন, ওসি আব্দুল আউয়ালের বাড়ি সিলেট বিভাগে, তিনি এম.সি কলেজে লেখাপড়া করে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করে দীর্ঘ ২০ বছর সিলেট রেঞ্জে অত্যন্ত সুনামের সহিত বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করেন। ৫ আগস্টের পর ওসি হিসেবে কানাইঘাটে যোগদান করে সিলেটের অন্যান্য থানার চাইতে কানাইঘাটের আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা সহ পুলিশের সেবা বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের মতবিনিময়, উঠানবৈঠক করায় কানাইঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ওসি আব্দুল আউয়ালকে থানা থেকে সরিয়ে দিতে এই কুচক্রী মহলটি বর্তমানে তার বিরুদ্ধে নানা ভাবে কুৎসা রটনা করছে। এতে করে পুলিশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এসব অপপ্রচারের সাথে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন কানাইঘাটের রাজনৈতিক ও সচেতন মহল। তারা বলছেন, সিলেটের প্রত্যেকটি সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান হচ্ছে, চোরাচালান প্রতিরোধে সকল বাহিনী নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তারমধ্যে কানাইঘাটে থানা পুলিশ ও বিজিবি’র নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করায় আগের চাইতে চোরাচালানের মতো অপরাধ অনেকাংশে কমে গেছে। চোরাচালানীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ায় তারা এখন আগের মতো বেপরোয়া ভাবে চোরাচালান করতে পারছেন না। যার কারনে চোরাকারবারী ও তাদের গডফাদাররা থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর