শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন

প্রতিবন্ধী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মীম হতে চান না সমাজের বোঝা।

রিপোটারের / ২১৩ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১

মোস্তাফিজুর রহমান,বাঘা (রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ

স্বপ্ন ছোয়ার অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাঘার প্রমি আক্তার মিম।সারা শরীর একেবারে বিকলাঙ্গ। চলতে ফিরতে তো দুরের কথা,পারেনা নিজে উঠে বসতে,এক মাত্র ভরসা তার জন্মদাত্রী মা । কখন এসে তাকে উঠে বসিয়ে দেবে সেই অপেক্ষাতে থাকতে হয় তাকে। যদিও কেউ তাকে ধরে বসিয়ে দেই তবুও পিছনে বালিশ বা শক্ত কিছু দিয়ে ঠেস দিতে হয়। যাতে করে সহজেই হেলান দিয়ে থাকতে পারে। যদিও হাতখানি একটু নাড়াতে পারলেও পারেনা তার পা দুখানা তুলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাইতে। জন্মাবধি এমনি করে বেড়ে ওঠা, আজ তার বয়স ১৮ বছর।

যৌবন উদ্দিপ্ত তরুনী হয়ে নানা রঙ্গের স্বপ্ন বুনানোর কথা আজ তার। অথচ নিয়তির চরম পরিহাসে আজ কোনরকম বেঁচে থাকা। নেই কোন উপায়ান্তর একটু আশা, একটু ভরসার। আধারে অচ্ছন্ন প্রমির জগৎ সংসার। এমনি করে দিন দিন প্রমি আক্তার বড় হচ্ছে আর দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে প্রমির মা বাবা। একটাই চিন্তা কি এর সমাধান!

প্রমি আক্তার মিম, বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পীরগাছা গ্রামে। তারা ৩ ভাই বোন। বড় ভাই মিলন বয়স ২৮ বছর, গ্রামেন্টস কর্মি আর ছোট ভাই আদিব, বয়স ৮ বছর, সেও তার মত প্রতিবন্ধী। বাবা মজিবর রহমান পেশায় কৃষক, মা ফিরোজা পারভিন গ্রীহিনী। মা ঘর গৃহস্থের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কখনও প্রতিবন্ধী মেয়ের কাছে আবার কখনও প্রতিবন্ধী ছেলের কাছে।

ভাগ্যের পরিহাসে জন্ম থেকেই মিম প্রতিবন্ধী হলে কি হবে! তার লক্ষ্য আকাশ ছোঁয়া। হতে চাননা পারিবার কিংবা সমাজের বোঝা। প্রতিবন্ধী হলেও সে শত বাধা অতিক্রম করে ২০১৯ সালে এস.এস.সি, পরিক্ষায় উর্ত্তিন হয়। বর্তমানে সে কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ালিখা করছে।

ইতিমধ্যে নানার দেওয়া হুইল চেয়ারে মায়ের সাহায্যে চলাফেরা করছে। প্রমি এখনও স্বপ্ন বাস্তবায়নে অটল। তাকে দেখা-শুনা,পড়া-লিখা এমন কি কলেজে নিয়ে যাওয়া আসা সব কিছুই করতে হয় মিমের মাকে। মা মেয়ের দারুন মনোবল। মিমের মায়ের সাথে কথা বলতেই চোখে ছল ছল পানি নিয়ে বলেন আমার মেয়েকে আমি সমাজের বোঝা হয়ে রাখতে চাইনা। আমি চাই আমার মেয়ে যেন তার অদম্য ইচ্ছে পুরুন করতে পারে।

দিনে দিনে বয়স বেড়ে চলেছে মিমের। বয়সন্ধিকাল অতিক্রম করে এখন সে যৌবন উদ্দিপ্ত তরুনী। এই বিকলাঙ্গ মনের দূঃখ ঘুচাতে কে হবে তার সাথি, তাই একাকিত্ব মনের দুঃখ ঘুচাতে মিম লেখালেখিকে করে উপজীব্য।

সে লিখতে পছন্দ করেন গান, ছড়া, কবিতা, গল্প মনে যা আসে তাই। এমনি করে নিরলস ভাবে লিখে চলেছে শত শত কবিতা গল্প মনের অজান্তে, এখন তার লেখায় মানুষ, সমাজ তথা মানবিকতার দারুন বহিঃপ্রকাশ।

গোলাপকে যতই ঢেকে রাখা যাক না কেন ; তার সুগন্ধ ছড়াবেই মিম তার উজ্জল দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যে তার লিখা ছড়া গল্প কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে এবং সুধী মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে মিমের জনপ্রিয় কবিতা মাটি, ঝর্ণা, শিক্ষক, হঠাৎ পরিচয় ।

হাজারো সমস্যা অতিক্রম করে মিমের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর যে প্রচেষ্টা তার প্রতি আশাবাদ ব্যাক্ত করে উইপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান শফিক বলেন, প্রতিবন্ধীদের যদি আমরা প্রতিবন্ধী না বলে তাদেরকে যদি আমরা বিশেষ শ্রেণীর মানুষ বলে আখ্যায়িত করলেইতাদের মনোবল অনেক বড় হবে। আমার ইউনিয়নে মীম এর বাসা। তার মনোবল এত বড় তা কল্পনা করা যায় না। আমি সব সময় তার জন্য দোয়া করি, সে যেন বড় একজন মানুষ হতে পারে। আমি সব সময় তার পাশে আছি।

স্বপ্ন ছোয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে ছুটে চলা মিমকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলনে, প্রমি আক্তার মিম শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও তার পড়াশোনায় অদম্য ইচ্ছা শক্তির সহযোগিতায় চালিয়ে যাচ্ছে এই জন্য তাকে ধন্যবাদ ও অভিবাদন জানাচ্ছি। মিম শর্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে পড়া লিখা চালিয়ে জাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তাহলে সীমিত সামথের্যর ভিতর দিয়ে উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।

আমাদের প্রশ্ন হলো এমন হাজারো মিম আমাদের সমাজে আছে, তারাও চাই আমাদের মত স্বাভাবিক জীবন নিয়ে চলতে ; আমাদেও উচিৎ এই সকল মানুষকে সমাজের বোঝা মনে না করে তাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও দূর করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তাদের সাথে সেই ভাবেই আচরণ করা যেটাতে তাকে পাহাড় সমান সাহস যোগাবে তাহলে মানুষ হিসেবে আমরা হয়তো মানবিক দায়টা একটু হলেও এড়াতে পারতাম। এই জন্য সকল মানবাধিকার বাস্তবায়ন সুধী মহলের সুদৃষ্টি আকর্ষন করছি। সামাজিক ভাবে রাষ্ট্রীয় ভাবে তারা যেন এগিয়ে আসেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর