পবিত্র মাহে রমজান ও বৈশাখের শেষভাগে তাপদাহ বাড়তে শুরু করেছে। মাঝে মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় উঁকি দিলেও পরক্ষনই প্রখর রোদে তাপদাহর তীব্রতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও দিন বড় ও রাত ছোট হচ্ছে তবুও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় মুসুল্লিরা প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে সারাদিন মাঠে কাজ করে রোজা রাখছেন। প্রভুর সান্নিধ্যে এক জন দিমমজুর শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে মাঠে কাজ করে এবং এক জন শ্রমিক হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও রোজাদার ব্যক্তি বছরে একটি মাস সিয়াম সাধনা করে।
সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের দিনমজুর বিশু প্রামাণিক জানান প্রথম ১০/১২ রোজায় শরীরের দুর্বলতা অনুভব হয় না। এ সময় শরীরে শক্তি পরিমান বেশি থাকে এবং রোদের তাপ কম থাকায় কষ্ট কম হয়। এখন গরম বেশি ক্রমেই শরীর দূর্বল হয়ে পড়ায় দিনমজুরদের রোজা রেখে কাজ করা কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট হলেও নিয়মিত রোজা রাখি।
দহকুলা গ্রামের দিনমজুর লোকমান হোসেন জানান রোজা রেখে প্রচন্ড গরমে ধান কাটা খুব কষ্টের কাজ।বেলা গরিয়ে যাওয়ার পর খিদে ও পিপাসায় রোজাদার দিনমজুর শারীরিক ও মানষিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরে। একটু গরম লাঘবের জন্য খাল/নদী/ পুকুরের ঠান্ডা পানিতে একাধিক বার গোসল করেন। রোজাদার দিনমজুর এ মাসে সকাল থেকে টানা বিকেল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত মাঠে কাজ করে ৪’শ টাকা মজুরি পাই।
দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য তথা গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ পূর্বজামানার ন্যায় এখনও মুড়ি বা পান্তা ভাত দিয়ে ইফতার করে। এতেই তারা সিক্ত। অর্থাৎ আঙ্গুর ফল টক গল্পের মতো। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের লকডাউনে এ শ্রেণি পেশার মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাটাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।সামনে ঈদ মাঠে কাজ করে যে পয়সা রোজগার করে বাজার অনুপাতে খাওয়া দাওয়া শেষে ছেলে মেয়ের জন্য ঈদের জামা কাপড় কেনার পয়সা থাকে না। আমাদের মতো গরীব মানুষের জীবনটাই কষ্টের।
উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের নিঃসন্তান বিধবা সুফিয়া বেগম ভোরের কন্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদককে জানান সারাদিন প্রচন্ড গরমে রোজা রেখে অন্যের বাড়িতে কাজ করেছি।চেয়ে আনা মুড়ি ও পান্তা ভাতে রান্না করা কচুর শাক মিশিয়ে ইফতার করছি। সোহ্ রীর সময় মাঠ থেকে তুলে আনা কচুর শাক ও একপট চাউল রান্না করে খেয়ে অর্ধেক ভাতে পানি দিয়ে পান্ত করে রেখেছিলাম।চোখের পানি ফেলে কান্না বিজরিত কণ্ঠে তিনি বলেন বয়স হয়ে গেছে আগের মত কাজ করতে পারি না। আমাদের মতো দুখি মানুষের কষ্ট কেউ বোঝে না।
এ বিষয়ে পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজ জানান ওই বিধবা নারীর কথা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমাকে জানায়নি। গণমাধ্যম কর্মিদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। আমি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই বিধবা নারীর জন্য প্রয়োনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো।